ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২১/০৩/২০২৩ ৭:৪৯ এএম

পুলিশের স্পেশাল ব্র্যাঞ্চের (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান। হত্যাকাণ্ডের পর তিনি প্রতিবেশী দেশ ভারতে পালিয়ে যান। সেখান থেকে ভারতের ভুয়া পাসপোর্ট নিয়ে পাড়ি জমান সংযুক্ত আরব-আমিরাতের দুবাইয়ে। এরপর দীর্ঘদিন তিনি পলাতক। সম্প্রতি আরাভ দুবাইয়ে একটি স্বর্ণের দোকান চালু করেছেন। তার সেই দোকান উদ্বোধন করতে যান বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমসহ বেশ কয়েকজন তারকা। এরপর থেকে তুমুল আলোচনায় আরাভ খান।

অনুসন্ধানে পুলিশ নিশ্চিত হয় ‘আরাভ খান’ নাম ধারণ করে দুবাইয়ে পাড়ি জমানো এই ব্যক্তিই পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আপন। এরপরই তার বিরুদ্ধে কীভাবে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা নিয়ে তৎপর হয় পুলিশ। ইন্টারপোলের কাছে রেড নোটিশ জারির আবেদন করা হয়। যোগাযোগ করা হয় ভারত ও দুবাইয়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গেও। দ্রুত তাদের সাড়াও মেলে। এরপরই আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ, ভারত ও দুবাইয়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ শুরু করেছে। এরইমধ্যে তাকে দেশে ফেরাতে রেড নোটিশ জারি করেছে ইন্টারপোলও।

এদিকে, হত্যা মামলার আসামি আরাভ খান চাপের মুখে হঠাৎ তার সোনার দোকান ‘আরাভ জুয়েলার্স’ ফাঁকা করে ফেলেছেন। সেখানে নেই কোনো স্বর্ণালংকার। দুবাই থেকে আরাভ জুয়েলারি শপের কিছু ছবি এসেছে জাগো নিউজের প্রতিবেদকের হাতে। ছবিগুলোতে দেখা যাচ্ছে, তার সেই সোনার দোকানটি পুরোপুরি ফাঁকা। সেখানে নেই কোনো স্বর্ণালংকার। দোকানের সামনে পড়ে আছে কথিত ৬০ কেজি সোনা দিয়ে বানানো বাজপাখি ও বাঘের লোগো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশ সদরদপ্তর আরাভ খানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড এলার্ট জারির আবেদন করে। রেড এলার্ট জারির পর নড়েচড়ে বসেছে দুবাইয়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও।

সূত্র জানায়, রেড এলার্ট জারির পর থেকে দুবাইয়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা আরাভ খানের মামলার এজাহার, অভিযোগপত্র, আদালতে জমা দেওয়া আসামিদের ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, আদালত থেকে জারি করা বিভিন্ন মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিয়েছেন।

আরাভ যে বাংলাদেশের নাগরিক, তা নিশ্চিত করতে তার বাবা ও মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ সব কিছু বাংলা ভাষার পাশাপাশি ইংরেজিতে রূপান্তর করে পাঠানো হয়েছে। এসব নথিপত্র পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কাজ শুরু করেছে দুবাইয়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্দি বিনিময় চুক্তি রয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের জেরে ভারতীয় একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থার লোকজনের সঙ্গে কথা বলছেন। আরাভ ভারতে কীভাবে ও কার সহযোগিতায় ভারতীয় পাসপোর্ট করেছে, দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা খতিয়ে দেখছে।

এদিকে, সোমবার (২০ মার্চ) ‘আরাভ খান’ নামের ফেসবুক পেজ থেকে দুটি পোস্ট শেয়ার করা হয়েছে। এর একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে আরাভ খানের বিরুদ্ধে জারি করা রেড নোটিশ সংক্রান্ত। ওই পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘আল্লাহ আপনি সহায় হোন’।

আরেকটি পোস্টে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের আরাভ খানের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির ঘোষণা সংক্রান্ত বক্তব্য শেয়ার করে লেখা হয়, ‘আল্লাহ আপনিই পারেন একমাত্র আমাকে এ ষড়যন্ত্রের হাত থেকে বাঁচাতে। বাংলা ভাষাভাষী যত মানুষ আছে, সবার কাছে আমি দোয়া ও ভালোবাসা কামনা করছি। এ মুহূর্তে আমার দোয়ার প্রয়োজন।’

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন উর রশীদ বলেন, ‘আরাভ খানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড এলার্ট জারি হয়েছে। এটা তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অন্যতম। এর আগে থেকেই দুবাই ও ভারতের সঙ্গে আমাদের কথা চলছিল।’

আরাভ খানের খোলা চিঠি
বাংলাদেশ-ভারত ও দুবাইয়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হওয়ার পর আরাভ খান তার ফেসবুকে একটি খোলা চিঠি পোস্ট করেছেন। সেখানে ‘খোলা চিঠি বাংলাদেশ’ শিরোনামে তিনি লিখেছেন, ‘আসসালামু আলাইকুম। আমি আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন এবং সর্বদাই আমার দোয়া থাকবে আপনাদের ওপর আপনারা যেভাবে আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন, আমি বাঁচি আর না বাঁচি- এ কথা আমার মনে থাকবে।’

‘জানি না আমার জীবনে আমি জেনে না জেনে যে ভুলগুলো করেছি, আপনারা যারা আমার পাড়া-প্রতিবেশী এবং আমাকে যারা চেনেন, যাদের সাথে আমার কোনো অন্যায় হয়ে থাকে, তারা আমাকে মাফ করে দেবেন। দেশবাসীর কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমি যদি কোনো ভুল করে থাকি, আপনারা আমাকে মাফ করে দেবেন। আমি জানি না কাল আমার সাথে কি হবে। কিন্তু আমি চাই ন্যায্য বিচার। সেটা হয়তো বা সম্ভব না। যাই হোক আল্লাহ একজন আছে। এ বিচার আমি আল্লাহর কাছে ছেড়ে দিলাম।

পাঠকের মতামত

ন্যূনতম খাদ্য গ্রহণে খরচ করতে হচ্ছে দারিদ্র্যসীমার ব্যয়ের চেয়ে প্রায় ৭০% বেশি

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে সুস্থভাবে জীবনধারণের জন্য প্রতিদিন যে পরিমাণ খাদ্যশক্তি (২ হাজার ১০০ ...

রোহিঙ্গাদের আত্তীকরণের পক্ষে নয় বাংলাদেশ: পররাষ্ট্র সচিব

রোহিঙ্গাদের আত্তীকরণ বাংলাদেশের জন্য বিবেচনাযোগ্য বিকল্প নয় বলে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) ঢাকা প্রধান ল্যান্স ...